জলসেচ ব্যবস্থা ও বিভিন্ন সারের ব্যবহার-সুস্থায়ী কৃষি

সুস্থায়ী কৃষিতে জলসেচ ব্যবস্থা ও বিভিন্ন সারের ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা ।

Table of Contents

সুস্থায়ী কৃষিতে জলসেচ ব্যবস্থা

কৃষিতে জলসেচ ব্যবস্থা

বহু প্রাচীনকাল থেকেই কৃষিতে জলসেচের প্রচলন চলে আসছে। প্রচলিত জল সংরক্ষণ ও জলসেচ পদ্ধতিগুলি সুস্থায়ী উপায়ে কৃষিতে উন্নতি ঘটায় এবং ফলন বৃদ্ধি করে থাকে। সাধারণভাবে জল বা বৃষ্টির জলের অপ্রতুলতা যেসব অঞ্চলে সর্বাধিক সেই সকল অঞ্চলে চাষের কাজে জলসেচের প্রয়োজন হয়। খাল কেটে কিংবা নালিপথে জমিয়ে রাখা জলকে কৃষিক্ষেত্রে প্রেরণ করা হয়। শুধু তাই নয়, বিশেষ বিশেষ ঋতুতে বিভিন্ন শস্যের চাষের ক্ষেত্রে জলের বিভিন্নতা দেখা যায়। যেমন – শীতকালীন শস্য চাষের ক্ষেত্রে জলের আধিক্য দেখা যায়। আবার বর্তমান প্রযুক্তি ও আধুনিকতা নির্ভর কৃষি ব্যবস্থায় জমিতে কীটনাশক, রাসায়নিক সার, উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহারের ফলেও অতিরিক্ত জলের প্রয়োজন হয়। যেখানে কাছাকাছি নদী নেই সেইসব অঞ্চলে বেশি জলসংরক্ষণ এবং জলসেচের জন্য কুয়ো, নলকূপ এবং স্যালোর ব্যবহার হয়। প্রচুর পরিমাণে ভূ-গর্ভস্থ জল ব্যবহার করার জন্য নলকূপের সঙ্গে পাম্প লাগিয়ে শস্যক্ষেত্রেই সেচের জলের জোগান দেওয়া হয়।

সুস্থায়ী কৃষিতে জলসেচের কৌশলসমূহ :-

বহু প্রাচীনকাল থেকেই কৃষিজমিতে কৃত্রিমভাবে জল সরবরাহের কাজ হয়ে আসছে। পূর্বে শুধুমাত্র নদী, জলাশয়, হ্রদ, বৃষ্টির জল প্রভৃতি থেকে কৃষিজমিতে জলসেচ করা হত। কিন্তু বর্তমানে পাম্প মেশিন আবিষ্কারের পর থেকে ভূগর্ভস্থ জলকেও জলসেচের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে প্রাচীনকালে কৃষিজমিতে জলসেচের পদ্ধতি বা কৌশল ছিল অনুন্নত। কিন্তু বর্তমানে যন্ত্রের সাহায্যে জলের অপচয় রোধ করে আধুনিক পদ্ধতি বা কৌশলের সাহায্যে জলসেচ করা হয়। জলসেচের বিভিন্ন কৌশল বা পদ্ধতিগুলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। – (ক) মুক্ত পদ্ধতি বা বৃহৎ মাত্রার সেচ পদ্ধতি বা নালা পদ্ধতি এবং (খ) বন্ধ পদ্ধতি বা ক্ষুদ্র সেচ পদ্ধতি বা নল পদ্ধতি।

মুক্ত বা নালা পদ্ধতি বা বৃহৎ মাত্রার জলসেচ পদ্ধতি :-

এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) সংজ্ঞা :- যখন এক ধরনের ফসল উৎপাদনের জন্য কোনো বিশাল আয়তনের জমিতে আল বা নালার মাধ্যমে কোনো জলাশয় বা কোনো নদীর জল সরবরাহ করা হয়, তখন তাকে মুক্ত বা নালা পদ্ধতি বা বৃহৎ মাত্রার সেচ পদ্ধতি বলা হয়।

(২) শ্রেণিবিভাগ :- বৃহৎ মাত্রার সেচ ব্যবস্থা দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত। যথা – (i) পৃষ্ঠীয় জলসেচ ব্যবস্থা ও (ii) উপপৃষ্ঠীয় জলসেচ ব্যবস্থা।

(৩) পৃষ্ঠীয় ও উপপৃষ্ঠীয় জলসেচ ব্যবস্থার ধারণা :- বিভিন্ন জলাশয় থেকে পাম্প দিয়ে জল তুলে, সেচ খালের জল জমির উপর দিয়ে চালনা করে অথবা নলকূপ বা কূপের সাহায্যে ভৌমজল কৃষিজমির উপর প্রবাহিত করাকে পৃষ্ঠীয় ও উপপৃষ্ঠীয় জলসেচ ব্যবস্থা বলা হয়। 

মুক্ত বা নালা পদ্ধতি বা বৃহৎ মাত্রার জলসেচ পদ্ধতির বিভিন্ন কৌশল :-

বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে মুক্ত পদ্ধতিতে জলসেচ করা হয়। যেমন –

(ক) খাল জলসেচ পদ্ধতি :-

এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) সংজ্ঞা :- স্বল্প ভূমিঢাল সম্পন্ন কৃষি জমির কাছে বিভিন্ন জলাশয়, যেমন – নদী, হ্রদ প্রভৃতি থাকলে সেখানকার জল খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সরবরাহ করা হয়। এই জলসেচ পদ্ধতিকে খাল জলসেচ পদ্ধতি বলা হয়। 

(২) শ্রেণিবিভাগ :- খাল জলসেচ পদ্ধতিতে জলের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে দুই ধরনের খালের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যথা – 

  • (i) প্লাবন খাল :- নদী থেকে একটি সুনির্দিষ্ট উচ্চতায় খাল খনন করে বর্ষার অতিরিক্ত জলকে ওই খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সরবরাহ করা হলে তাকে প্লাবন খাল বলে। ভারতের দক্ষিণাংশে এই খাল লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত শুষ্ক ঋতুতে বা বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকলে এই খালে জল থাকে না। প্রধানত বর্ষার জোয়ারের ফলে বা বর্ষার সময় বন্যা হলে প্লাবন খালে জল থাকে।
  • (ii) নিত্যবহ বা স্থায়ী খাল :- নিত্যবহ নদী বা পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ওপরে আড়াআড়ি ভাবে বাঁধ নির্মাণ করে সৃষ্ট জলাধার থেকে যে খাল খনন করা হয়, তাকে নিত্যবহ বা স্থায়ী খাল বলে। ভারতে বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা কার্যকরী হওয়ার ফলে নিত্যবহ বা স্থায়ী খালের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধরনের খালে সারাবছর জল থাকে।

(৩) খাল জলসেচ পদ্ধতির গুরুত্ব :-

  • (i) পতিত জমিকে খাল জলসেচের মাধ্যমে কৃষিজমিতে পরিণত করা সম্ভব হয়। যেমন – রাজস্থানের এক বিশালায়তন অব্যবহৃত জমিতে ইন্দিরা গান্ধি ক্যানেল-এর মাধ্যমে শস্য উৎপাদন করা হচ্ছে। 
  • (ii) এই পদ্ধতির সাহায্যে এক বিশাল আয়তন বিশিষ্ট জমিতে জলসেচ করা সম্ভব। 
  • (iii) খালের জল থেকে কিছু পরিমাণ জল ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, যার ফলে ভৌমজলের ভাণ্ডার পরিপূর্ণ হয়। 
  • (iv) খালের জলে নদীর পলি এসে জমা হয় এবং এই পলি চাষের জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।

(৪) খাল জলসেচ পদ্ধতির সমস্যা :- এই পদ্ধতিতে জলসেচের বিভিন্ন সমস্যা গুলি হল –

  • (i) শুষ্ক সময়ে জলাধার, নদী প্রভৃতিতে জলের পরিমাণ কমে গেলে জলসেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। 
  • (ii) বর্ষাকালে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে বন্যা হয়ে থাকে। 
  • (iii) ভূ-অভ্যন্তরের নোনা জল খালের জলের সঙ্গে মিশ্রিত হলে মাটি লবণাক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা যায়। ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে এই সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। 
  • (iv) খাল তৈরির প্রাথমিক ব্যয় যথেষ্ট বেশি এবং এর ফলে প্রচুর জমি নষ্ট হয়ে থাকে। 
  • (v) পার্বত্য ও মালভূমি অঞ্চলে খাল সেচ পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। 
  • (vi) খাল সংলগ্ন জলমগ্ন স্থানে মশা সহজেই বংশবৃদ্ধি করে এবং ম্যালেরিয়াজনিত সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।
(খ) খাত রেখা জলসেচ পদ্ধতি :-

এই পদ্ধতির বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) সংজ্ঞা :- এই পদ্ধতিতে প্রশস্ত প্রধান নালা খনন করা হয় এবং ওই খালের দুই পাশে বা একপাশে সমান ঢালযুক্ত যে চাষযোগ্য জমি থাকে সেখানে প্রধান নালা থেকে সৃষ্ট অসংখ্য ছোটো নালা দ্বারা জলের জোগান দেওয়া সম্ভব হয়।

(২) শ্রেণিবিভাগ :- খাত রেখা জলসেচ পদ্ধতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকারভেদ লক্ষ্য করা যায়। যথা –

  • (a) সমান্তরাল সরল সমতল খাত সেচ :- সমতল ও ক্ষুদ্র জমিতে লক্ষ্য করা যায়। 
  • (b) সরল উতরাই খাত সেচ :- ঢালযুক্ত ও বিশালায়তন জমিতে মৃত্তিকার ক্ষয় প্রতিরোধের জন্য এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। 
  • (c) উচ্চস্তরীয় খাত সেচ :- দুটি খাতের মধ্যবর্তী জমিকে প্রশস্ত ও উঁচু করে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। 
  • (d) পর্যায়ক্রমিক খাত সেচ :- শুষ্ক ও লবণাক্ত মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলের খাতগুলিকে পরপর কিছুদিন জলপূর্ণ করে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। 
  • (e) তরঙ্গায়িত খাত সেচ :- যেসব অঞ্চলে কাঁকরযুক্ত মাটি লক্ষ্য করা যায়, সেখানে পরস্পর সংলগ্ন ভাবে দানাশস্য চাষের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির প্রয়োগ দেখা যায়।

(৩) বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ :- এই পদ্ধতিতে জলসেচের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন –

  • (a) নালার ঢাল :- জলের গতিবেগ ও মৃত্তিকার প্রবণতার দ্বারা প্রধান নালার অনুদৈর্ঘ্য ঢালের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। 
  • (b) নালার গঠন :- বেশি ঢালযুক্ত জমিতে নালাগুলি সাধারণত তির্যকভাবে অবস্থান করে। নালার গঠন মূলত নির্ভর করে শস্যের প্রকৃতি ও ভূমির ঢালের ওপরে। 
  • (c) অনুপ্রবেশের মাত্রা :- মৃত্তিকার গঠন ও প্রকৃতির ওপর জলের অনুপ্রবেশের মাত্রা নির্ভর করে। যেমন – এঁটেল মাটিতে জলের অনুপ্রবেশের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম হয়ে থাকে। 
  • (d) নালার বিস্তার :- শ্রমিকদের সেচ পদ্ধতি সংক্রান্ত ধারণা, কর্মদক্ষতা ও মৃত্তিকার প্রবেশ্যতার ওপর প্রধান নালার বিস্তার নির্ভর করে। 
  • (e) ফসলের প্রকৃতি :- খাত রেখা জলসেচ পদ্ধতির মাধ্যমে সাধারণত আখ, কার্পাস ইত্যাদি এমন কিছু ফসল চাষ করা হয়, যাদের জলের চাহিদা কম। আলু, ভুট্টা প্রভৃতি ফসল এই পদ্ধতির সাহায্যে উৎপাদন করা হয়।
(গ) অববাহিকা বা বেসিন বা চেক জলসেচ পদ্ধতি :-

এই পদ্ধতিতে জলসেচের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) সংজ্ঞা :- যে পদ্ধতিতে ক্ষুদ্রায়তন জমির চারদিকে উঁচু বাঁধ দিয়ে ঘিরে ফেলে তার ভিতরে জলসেচ করা হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত মৃত্তিকার ভিতরে জলের অনুপ্রবেশ না ঘটছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ওই অববাহিকার ভিতরেই জলকে আবদ্ধ করে রাখা হয়, সেই পদ্ধতিকে অববাহিকা বা বেসিন বা চেক জলসেচ পদ্ধতি বলে। 

(২) শ্রেণিবিভাগ :- অববাহিকা বা বেসিন জলসেচ পদ্ধতিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় – 

  • (a) সমোন্নতি বেসিন জলসেচ পদ্ধতি :- এক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলের ঢালু ভূমিভাগে সমোন্নতি রেখা অনুযায়ী লম্বা আকারের অববাহিকা তৈরি করা হয়। 
  • (b) বর্গাকার বেসিন জলসেচ পদ্ধতি :- এক্ষেত্রে সমতল কৃষিজমিকে আয়তক্ষেত্র বা বর্গক্ষেত্রের আকারে বিভক্ত করা হয়।

(৩) বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ :- এই পদ্ধতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য গুলি হল – (i) অববাহিকা জলসেচ পদ্ধতির সাহায্যে প্রধানত ফল উৎপাদন করা হয়। (ii) জলপ্রবাহকারী খালের গভীরতা ও নদীর বিন্যাসের ওপর এই পদ্ধতি অনেকাংশে নির্ভর করে। (iii) তা ছাড়া, অববাহিকার আকৃতি ও মৃত্তিকার ধর্মও অববাহিকা বা চেক জলসেচ পদ্ধতিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

(৪) সমস্যা :- এই পদ্ধতিতে জলসেচের বিভিন্ন সমস্যা গুলি হল – (i) এক্ষেত্রে মৃত্তিকা অত্যন্ত শক্ত প্রকৃতির হওয়ায় প্রায়ই কর্ষণের প্রয়োজন পড়ে। (ii) এই পদ্ধতি সব ধরনের ফসল উৎপাদনে সহায়ক নয়, কারণ এক্ষেত্রে গাছের গোড়ায় জল জমা হয়ে থাকে।

(ঘ) কিনারা জলসেচ পদ্ধতি :-

এই পদ্ধতিতে জলসেচের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) সংজ্ঞা :- যে পদ্ধতিতে আল দ্বারা সেচের জলকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং দুটি আলের মাঝখানের সমতল জমিতে জলের জোগান দেওয়া হয়, তাকে কিনারা জলসেচ পদ্ধতি বলে।

(২) শ্রেণিবিভাগ :- কিনারা জলসেচ পদ্ধতিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় – 

  • (a) সমোন্নতি রেখা সীমানা ফালি সেচ :- পাহাড়ি ও মালভূমি অঞ্চলের ভূমিক্ষয় রোধের জন্য কৃষিজমিতে সমোন্নতি রেখা অনুসরণ করে ফালি তৈরি করে জলসেচের ব্যবস্থা করা হয়। এই জলসেচের সাহায্যে ডাল, ভুট্টা, তামাকের চাষ করা হয়। 
  • (b) সরল সীমানা ফালি সেচ :- মৃদু ঢালু বা প্রায় সমতল কৃষিজমিকে লম্বা ফালিতে ভাগ করা হয় এবং দুটি ফালির মাঝখানের অংশে জলসেচ করা হয়। এই পদ্ধতির সাহায্যে ওট, বিট, গম প্রভৃতি উৎপাদন করা হয়।

(৩) সমস্যা :- এই পদ্ধতিতে জলসেচের বিভিন্ন সমস্যা গুলি হল – (i) এই পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত ঢালু, সুদীর্ঘ ও আয়তাকার জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। (ii) কিনারাতে জল নিষ্কাশন না করা হলে ভূমিক্ষয় ঘটে থাকে। নিউজিল্যান্ডে এই সেচ ব্যবস্থা যথেষ্ট প্রচলিত।

(ঙ) প্লাবন জলসেচ পদ্ধতি :-

এই জলসেচ পদ্ধতিতে জমির উপর যাতে জল দাঁড়িয়ে থাকে তার জন্য বিশালায়তন জমিতে খাল বা নদী, পুকুর ও অন্যান্য জলাশয় থেকে জল তুলে অথবা ভৌমজল তুলে জমিটিকে পূর্ণ করা হয়। ধান জাতীয় যেসব ফল চাষের ক্ষেত্রে জমিতে জল দাঁড়িয়ে থাকা প্রয়োজন সেক্ষেত্রে প্লাবন জলসেচ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

(চ) বেসিন ও বলয় জলসেচ পদ্ধতি :-

হর্টিকালচার বা ফুল, সবজি, ফল প্রভৃতি উৎপাদনের জন্য গাছের গোড়ায় বর্গাকৃতি বা গোলাকৃতির বেসিন বা বলয় তৈরি করা হয় এবং প্রধান খাল সংলগ্ন শাখা খাল থেকে জল সরবরাহ করা হয়।

(ছ) স্থির-সমতলীয় জলসেচ পদ্ধতি :-

এই জলসেচ পদ্ধতিতে কৃষিজমির সব জায়গায় জল সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জমিকে সমতল করে জমিতে আল দিয়ে আবদ্ধ করা হয়, যাতে সেচের জল একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। প্রধানত ধান চাষের ক্ষেত্রে এই জলসেচ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

বন্ধ বা নল পদ্ধতি বা ক্ষুদ্র মাত্রার জলসেচ পদ্ধতি :-

এই পদ্ধতিতে জলসেচের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) সংজ্ঞা :- কৃত্রিম পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রযুক্তির সহায়তায় যখন স্বল্প পরিমাণ জলের সাহায্যে বেশি পরিমাণ কৃষিজমিতে জলসেচ করা হয়, তখন তাকে ক্ষুদ্র মাত্রার জলসেচ পদ্ধতি বলে। এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে পাইপ বা নল ব্যবহার করা হয়, যার একটি দিক জলের উৎসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে অন্য দিকটি কৃষিজমিতে উন্মুক্ত থাকে এবং এই জলসেচ পদ্ধতিতে জল কৃষিজমির বাইরে নির্গত হতে না পারায়, একে বন্ধ বা নল পদ্ধতি বলা হয়।

(২) বিশেষ বৈশিষ্ট্য :- এই পদ্ধতিতে জলসেচের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন – (i) স্বল্প পরিমাণ জল ব্যবহার করা হয়। (ii) বিস্তীর্ণ জমিতে এই পদ্ধতিতে জলসেচ করা সম্ভব নয়। (iii) জলের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা হয়। (iv) শুষ্ক বা প্রায় শুষ্ক অঞ্চলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। (v) এই পদ্ধতির সাহায্যে জলের অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়। 

(৩) তাৎপর্য :-

  • (i) সব প্রকৃতির ভূমিভাগে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
  • (ii) যন্ত্রপাতির স্থাপন ও ব্যবহার যথেষ্ট সহজসাধ্য।
  • (iii) জল সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।
  • (iv) ফসলের গুণগত ও পরিমাণগত মান বজায় থাকে।
  • (v) সারের যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হয়।
  • (vi) মৃত্তিকা ক্ষয় হ্রাস পায়।
  • (vii) শ্রমশক্তির ব্যয় কম হয়।

বন্ধ বা নল পদ্ধতি বা ক্ষুদ্র মাত্রার জলসেচ পদ্ধতির বিভিন্ন কৌশল :

এই পদ্ধতিতে জলসেচের বিভিন্ন কৌশল গুলি হল নিম্নরূপ –

(ক) বিন্দু জলসেচ পদ্ধতি :-

এই পদ্ধতিতে জল সেচের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) সংজ্ঞা :- যে জলসেচ পদ্ধতিতে গাছের মূলে পাইপের ছিদ্রের সাহায্যে বিন্দু বিন্দু করে জল দেওয়া হয়, তাকে বিন্দু জলসেচ পদ্ধতি বলে।

(২) পদ্ধতি :- এই পদ্ধতির সাহায্যে মাটির নীচে রাখা ১.৫-২.৫ সেমি ব্যাসবিশিষ্ট প্লাস্টিকের পাইপের খোলা মুখ দিয়ে ধীর গতিতে জল বেরিয়ে গাছের মূলকে ভিজিয়ে দেয়। এই পদ্ধতির সাহায্যে ভারতের মহারাষ্ট্রে কলা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে আঙুর প্রভৃতি উৎপাদন করা হয়। বিন্দু জলসেচ পদ্ধতির সাহায্যে জল ও সার দুই ধরনের উপাদানেরই জোগান দেওয়া সম্ভব হয়। একে ফাটিগেশন পদ্ধতিও বলা হয়।

(৩) গুরুত্ব :- এই পদ্ধতিতে জল সেচের বেশ কিছু গুরুত্ব আছে। যেমন –

  • (i) এই পদ্ধতির সাহায্যে সবটুকু জল গাছের মূলে এসে জমা হয়। এর ফলে প্রায় ২৫%-৫৫% জলের অপচয় রোধ করা যায়।
  • (ii) প্রতিটি গাছকে তার চাহিদা অনুযায়ী জল দেওয়া সম্ভব হয়।
  • (iii) মৃত্তিকার উর্বরতা বজায় রাখা যায় এবং মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয়।
  • (iv) কৃষিজমি জলমগ্ন হয়ে পড়ে না।
  • (v) এক্ষেত্রে অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় ব্যয় যথেষ্ট কম হয়।
  • (vi) গাছের বৃদ্ধি ভালোভাবে হওয়ায় ফসল উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

(৪) সমস্যা :- এই পদ্ধতিতে জল সেচের বিভিন্ন সমস্যা গুলি হল –

  • (i) এই পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য প্রয়োজন।
  • (ii) এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রাথমিক ব্যয় আপেক্ষাকৃত বেশি।
  • (iii) পাইপে অপরিচ্ছন্ন জল প্রবেশ করলে জলসেচ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়।
  • (iv) পাইপের রক্ষণাবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে অনেক সময় যথেষ্ট অর্থ ব্যয় হওয়ায় কৃষকদের কাছে পদ্ধতিটির গ্রহণযোগ্যতা কম। 
(খ) ফোয়ারা জলসেচ পদ্ধতি :-

এই পদ্ধতিতে জলসের ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) সংজ্ঞা :- যে জলসেচ পদ্ধতিতে পাইপের মাধ্যমে উচ্চচাপযুক্ত অবস্থায় জল ফোয়ারার মতন জমিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তাকে ফোয়ারা জলসেচ পদ্ধতি বলে।

(২) শ্রেণিবিভাগ :- ফোয়ারা জলসেচ পদ্ধতিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

  • (a) স্থির ফোয়ারা জলসেচ :- এই পদ্ধতিতে অনেক দূরে জল পৌঁছোনোর জন্য পাইপের নজেলটিকে সুনির্দিষ্ট দিকে স্থির করে রাখা হয়। 
  • (b) ঘূর্ণায়মান ফোয়ারা জলসেচ :- এক্ষেত্রে পাইপের নজেলটি ঘুরতে থাকে এবং জমির চারদিকে জল ফোয়ারার আকারে ছড়িয়ে পড়ে। 
  • (c) রেখা ফোয়ারা জলসেচ :- বাগান ও ছোটো আয়তনের জমিতে নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুযায়ী ছিদ্রবিশিষ্ট পাইপ স্থাপন করা হয় এবং জমিতে স্প্রে করে জলের জোগান দেওয়া হয়। 
  • (d) প্রপেলার ফোয়ারা জলসেচ :- উন্নত দেশগুলিতে গম উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে মূল পাইপ থেকে ঝুলন্ত ছোটো পাইপগুলির নীচের নজেলটি প্রপেলারের মতো ঘুরতে থাকে এবং জল চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। 

(e) ছিদ্রবিশিষ্ট পাইপ :- মূল পাইপ থেকে ঝুলন্ত শাখা পাইপে অসংখ্য ছিদ্র থাকে এবং উচ্চ চাপে জল ওই ছিদ্রগুলি থেকে ফোয়ারার মতন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

(৩) গুরুত্ব :- এই পদ্ধতিতে জল সেচের বিশেষ গুরুত্ব আছে। যেমন – (i) জমির সর্বত্র জল সরবরাহ করা সম্ভব হয়। (ii) জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জল সংরক্ষণ করা যায়। (iii) জলের নিয়ন্ত্রিত সরবরাহের মাধ্যমে মৃত্তিকাক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়। (iv) শস্যকে শীতল করা, বালুকণা ও তুহিনকণা মুক্ত করার কাজে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। (v) এটি শ্রমনিবিড় পদ্ধতি নয়।

(৪) সমস্যা :- এই পদ্ধতিতে জল সেচের বিভিন্ন সমস্যাগুলি হল – (i) একই পরিমাণ জল সব জায়গায় সমান ভাবে বণ্টন করা সম্ভব হয় না। (ii) যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ পদ্ধতি (iii) ঝড়ঝঞ্ঝায় এই পদ্ধতি ব্যাহত হয়। (iv) উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ ছাড়া এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না।

(গ) নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ :-

নলকূপের সাহায্যে ভৌমজল তুলে এনে যখন বিস্তীর্ণ জমিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন তাকে নলকূপের সাহায্যে জলসেচ বলে। ধান, গম প্রভৃতি ফসল চাষের ক্ষেত্রে এই জলসেচ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

উপরোক্ত পদ্ধতি গুলি ছাড়াও জলসেচের আরও কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যেমন –

(১) জলসিঞ্চন জলসেচ পদ্ধতি :- এই জলসেচ পদ্ধতিতে জমিতে স্থাপিত সুদীর্ঘ ছিদ্রযুক্ত নলের সাহায্যে পিচকারির মতো জল ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে জলের চাপ হ্রাস বৃদ্ধির মাধ্যমে জলের জোগান নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

(২) কেন্দ্রীয় কীলক জলসেচ পদ্ধতি :- এই জলসেচ পদ্ধতিতে একটি চাকাযুক্ত টাওয়ারের একটি বাহুতে অনেকগুলি পাইপকে একত্রে সংযুক্ত করা হয় এবং টাওয়ারটি যখন ঘুরতে থাকে তখন একটি কীলক বিন্দু থেকে জমির চারদিকে জল সরবরাহ করা হয়। এক্ষেত্রে স্বল্প শক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎচালিত মোটরের মাধ্যমে জলের জোগান দেওয়া হয় বলে একে Low Energy Precision Application LEPA বলা হয়।

(৩) ঘনীভবন জলসেচ পদ্ধতি :- যে অঞ্চলে শিশির বা কুয়াশা লক্ষ্য করা যায়, সেই অঞ্চলের বায়ু থেকে ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় জল সংগ্রহ করে জলসেচ করা যেতে পারে। প্রধানত আঙুর উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে জলসেচ করা হয়ে থাকে।

জলসেচের প্রয়োজনীয়তা :-

প্রখর তাপে মাটি শুকিয়ে যায় এবং শক্ত হয়ে যায়। মাটির চারধারে যে জল সংলগ্ন থাকে, তাকে কৈশিক জল বলে। গাছ মূল দিয়ে কেবল এই কৈশিক জলই শোষণ করতে পারে। মাটির জল শুকিয়ে গেলে এই জল মাটিতে প্রবেশ করে তখন গাছ তা শোষণ করতে পারে না। জলের অভাবে গাছ নেতিয়ে পড়ে এবং শুকিয়ে মারা যায়। তা ছাড়া মাটিতে থাকে উদ্ভিদের পুষ্টিদ্রব্য (খনিজ লবণ)। এই পুষ্টিদ্রব্য জলের সঙ্গে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে এবং জল শোষণের মাধ্যমে উদ্ভিদ দেহে প্রবেশ করে। উদ্ভিদ দেহে খনিজ লবণের ঘাটতি দেখা দিলে গাছের নানা রকম রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়। জলসেচ করা হলে মাটি নরম হয়, কৈশিক জলের পরিমাণ বাড়ে এবং খনিজ লবণগুলি জলে দ্রবীভূত হয়। গাছ সহজেই মূল দিয়ে জল ও খনিজ লবণ শোষণে সক্ষম হয়। উদ্ভিদের বৃদ্ধি, সালোকসংশ্লেষ, সংবহন ইত্যাদি কাজগুলি সুসম্পন্ন হয়।


সুস্থায়ী কৃষিতে বিভিন্ন সারের ব্যবহার

প্রশ্ন -১: সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থাপনায় জৈব সারের গুরুত্ব আলোচনা কর? 

জৈব সার :-

জীবের দেহ থেকে প্রাপ্ত অর্থাৎ উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে যে সার প্রস্তুত করা হয় তাকে জৈব সার বলা হয়। 

উদাহরণ :- গোসার সমস্যা ইত্যাদি।

গুরুত্ব :-

সুস্থায়ী কৃষিকাজে জৈব সারের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন –

(ক) মাটির গুণমান বৃদ্ধি :- জৈব সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। জৈব সারের মধ্যে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি রয়েছে। ফলে মাটির কাঠামো এবং গুণমান উন্নত হয়।

(খ) উপকারী জীবাণুর ক্রিয়া-কলাপ বৃদ্ধি :- জৈব সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে উপকারী জীবাণুগুলির কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাদের প্রজননে সহায়তা করে। এই পদ্ধতিতে মাটি থেকে সহজ উপায়ে খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে ফসল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।

(গ) কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস :- মাটিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের আধিক্য জনিত কারণে যে কোনো বিষয়ের বিষ হ্রাস করতে জৈব সার সহায়তা করে।

(ঘ) উপকারী জীবের উপস্থিতি :- যে মাটিতে জৈব পদার্থ প্রয়োগ করা হয় সেখানে কেঁচো, পিঁপড়ে গর্ত করে। এর ফলে গাছের শিকড় গুলি ভালোভাবে অক্সিজেন পায় এবং মাটিতে বায়ু সঞ্চালন সহজ হয়। ফলস্বরূপ গাছগুলি সতেজ হয়ে ওঠে।

(ঙ) ফসলের ফলন ও গুণমান বৃদ্ধি :- জৈব সার ফসলের ফলন ও গুনমানবৃদ্ধি করে। তাছাড়া সঞ্চিত শস্যের সঞ্চয় ক্ষমতাকেও বৃদ্ধি করে জৈব সার।

প্রশ্ন -২: কৃষিক্ষেত্রে সবুজ সার ব্যবহারের গুরুত্ব আলোচনা কর?

সাধারণত জমিতে কোনো শস্য বপন করে তা সবুজ অবস্থাতেই আবার সেই জমিতে মিশিয়ে দিয়ে যে সার তৈরী করা হয় তাকে সবুজ সার বলে। এই সার নানা ভাবে মাটির উর্বরতা বাড়াতে সহায়তা করে।

(ক) মাটির পুষ্টি উপাদান বৃদ্ধি :-

সবুজ সার উৎপাদনকারী শুঁটি জাতীয় ফসল গুলি, হেক্টর প্রতি ১০ থেকে ২৫ টন সবুজ স্যার উৎপাদন করে। এদের মাধ্যমে যা পুষ্টি উপাদন মাটিতে সংযুক্ত হয় তার পরিমাণ প্রায় তিন থেকে আট টন খামার সারের সমতুল্য।

(খ) মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি :-

সবুজ সার হেক্টর প্রতি ৬০-১০০ কেজি নাইট্রোজেন মাটিতে যোগ করে। তাছাড়া ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা ইত্যাদি উপাদানের সহনযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়।

(গ) মাটির ক্ষয় রোধ :-

সবুজ সার তৈরীর ফসল গুলি মাটিকে ঢেকে রাখে। ফলে পুষ্টি মৌলের হ্রাসের পরিমাণ কমে যায়, মাটি সংরক্ষিত হয় ও মাটির ক্ষয় কম হয়।

(ঘ) হিউমাসের পরিমাণ বৃদ্ধি :-

এই সার ব্যবহারের ফলে মাটির উপকারি জীবাণুগুলির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং জমিতে হিউমাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

(ঙ) জমির ভৌত অবস্থার উন্নতি :-

সবুজ সার ব্যবহারের ফলে জমির জলধারণ ক্ষমতা, বায়ু চলাচল ক্ষমতা ও অন্যান্য ভৌত অবস্থার উন্নতি ঘটে।

(চ) স্বাভাবিক রাসায়নিক বিক্রিয়া :-

দীর্ঘদিন ধরে সবুজ সার ব্যবহারের ফলে জমির ক্ষারত্বের পরিমাণ কমে এবং মাটির রাসায়নিক বিক্রিয়া স্বাভাবিক হয়।

(ছ) জৈব পদার্থের যোগ :-

সাধারণত শুঁটি জাতীয় ফসল সবুজ সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরা বাতাসের মুক্ত নাইট্রোজেনকে মূলের অর্বুদের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে। ফলে মাটির নাইট্রোজেনের পরিমাণ অনেক বেশি হয় এবং মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ হয়।

প্রশ্ন -3: কৃষিক্ষেত্রে সবুজ সার ব্যবহারের গুরুত্ব আলোচনা কর?

সাধারণত জমিতে কোনো শস্য বপন করে তা সবুজ অবস্থাতেই আবার সেই জমিতে মিশিয়ে দিয়ে যে সার তৈরী করা হয় তাকে সবুজ সার বলে। এই সার নানা ভাবে মাটির উর্বরতা বাড়াতে সহায়তা করে।

(ক) মাটির পুষ্টি উপাদান বৃদ্ধি :-

সবুজ সার উৎপাদনকারী শুঁটি জাতীয় ফসল গুলি, হেক্টর প্রতি ১০ থেকে ২৫ টন সবুজ স্যার উৎপাদন করে। এদের মাধ্যমে যা পুষ্টি উপাদন মাটিতে সংযুক্ত হয় তার পরিমাণ প্রায় তিন থেকে আট টন খামার সারের সমতুল্য।

(খ) মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি :-

সবুজ সার হেক্টর প্রতি ৬০-১০০ কেজি নাইট্রোজেন মাটিতে যোগ করে। তাছাড়া ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা ইত্যাদি উপাদানের সহনযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়।

(গ) মাটির ক্ষয় রোধ :-

সবুজ সার তৈরীর ফসল গুলি মাটিকে ঢেকে রাখে। ফলে পুষ্টি মৌলের হ্রাসের পরিমাণ কমে যায়, মাটি সংরক্ষিত হয় ও মাটির ক্ষয় কম হয়।

(ঘ) হিউমাসের পরিমাণ বৃদ্ধি :-

এই সার ব্যবহারের ফলে মাটির উপকারি জীবাণুগুলির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং জমিতে হিউমাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

(ঙ) জমির ভৌত অবস্থার উন্নতি :-

সবুজ সার ব্যবহারের ফলে জমির জলধারণ ক্ষমতা, বায়ু চলাচল ক্ষমতা ও অন্যান্য ভৌত অবস্থার উন্নতি ঘটে।

(চ) স্বাভাবিক রাসায়নিক বিক্রিয়া :-

দীর্ঘদিন ধরে সবুজ সার ব্যবহারের ফলে জমির ক্ষারত্বের পরিমাণ কমে এবং মাটির রাসায়নিক বিক্রিয়া স্বাভাবিক হয়।

(ছ) জৈব পদার্থের যোগ :-

সাধারণত শুঁটি জাতীয় ফসল সবুজ সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরা বাতাসের মুক্ত নাইট্রোজেনকে মূলের অর্বুদের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে। ফলে মাটির নাইট্রোজেনের পরিমাণ অনেক বেশি হয় এবং মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ হয়।


Leave a Comment