সুস্থায়ী কৃষির উপাদান সমূহ: মিশ্র কৃষি, মাইকোরাইজা

সুস্থায়ী কৃষির উপাদান সমূহ আলোচনা প্রসঙ্গে মিশ্র কৃষি বা মিশ্র চাষ কাকে বলে ? মিশ্র কৃষির বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করা হল এবং মাইকোরাইজা কি ? ফসল উৎপাদনে মাইকোরাইজার ভূমিকা আলোচনা করা হল।

সুস্থায়ী কৃষির উপাদান সমূহের মধ্যে মিশ্র কৃষি ও মাইকোরাইজা বিষয়ে দুটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হল –

  • প্রশ্ন-১: মিশ্র কৃষি বা মিশ্র চাষ কাকে বলে ? মিশ্র কৃষির বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর।
  • প্রশ্ন-2: মাইকোরাইজা কি ? ফসল উৎপাদনে মাইকোরাইজার ভূমিকা আলোচনা কর।

মিশ্র কৃষি বা মিশ্র চাষ কি ও এই কৃষির বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা

প্রশ্ন-১: মিশ্র কৃষি বা মিশ্র চাষ কাকে বলে ? মিশ্র কৃষির বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর।

মিশ্র কৃষি বা মিশ্র চাষ কাকে বলে ?

অনুকূল প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের সুযোগ নিয়ে যে বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থায় একই কৃষি খামারে কৃষি জমি থেকে ফসল উৎপাদনের সাথে সাথে পশুপালন, হাঁস মুরগি প্রতিপালন এবং ফল ও শাকসবজি উৎপাদন করা হয় তাকে মিশ্র কৃষি বলে।

মিশ্র কৃষি বা মিশ্র চাষের অবস্থান :-

পৃথিবীর অধিকাংশ মিশ্র কৃষি অঞ্চল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত।

মিশ্র কৃষির বৈশিষ্ট্য :-

মিশ্র কৃষি বা মিশ্র চাষের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য গুলি হল –

  • (ক) শস্যাবর্তন :- ফসল উৎপাদনে শস্য আবর্তন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এই পদ্ধতিতে একই জমিতে বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়ে থাকে।
  • (খ) কৃষি জোত :- মিশ্র কৃষি অঞ্চলের কৃষি জোত গুলি মাঝারি থেকে বৃহৎ আকৃতির হয়ে থাকে। কারণ এই কৃষিতে একই জমিতে কৃষি কাজের পাশাপাশি পশু পালন করা হয় বলে বড় আকৃতির জমির প্রয়োজন হয়।
  • (গ) ঝুঁকিহীন লাভজনক কৃষি :- বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দ্রব্যের উৎপাদন হওয়ায় বাজারে কোনো না কোনো দ্রব্যের চাহিদা সব সময় থাকে। কৃষকরা তা বাজারে বিক্রি করা অর্থ উপার্জন করে।
  • (ঘ) উদ্বৃত্ত ফসল :- এই মিশ্র কৃষি মূলত বাজারে বিক্রি করে মুনাফা পাওয়ার জন্য করা হয় বলে কৃষিজ দ্রব্য ও পশুজাত বিভিন্ন উপাদান প্রচুর পরিমাণে উদ্বৃত্ত থাকে।
  • (ঙ) শ্রম নিবিড় কৃষি :- সারা বছর ধরে বিভিন্ন ফসলের চাষ ও তার সাথে পশুপালন করা হয় বলে মিশ্র কৃষিতে প্রচুর শ্রমশক্তির প্রয়োজন হয়ে থাকে। সারা বছর ধরে কাজের যোগান থাকে বলে ছত্দ্ম বেকারত্বের সৃষ্টি হয় না।
  • (চ) যন্ত্রপাতি নির্ভর কৃষি :- এই কৃষিতে অনেক ছোট বড় বিভিন্ন যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। মিশ্র কৃষি অঞ্চলের শ্রমিকরা শিক্ষিত হওয়ায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না।
  • (ছ) জমির উর্বরতা বজায় :- এই কৃষিতে শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে এবং জৈব সারের ব্যবহারের মাধ্যমে চাষ করা হয় বলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায় না।

মিশ্র কৃষি সুবিধা :-

মিশ্র কৃষির নানাবিধ সুবিধা গুলি হল –

  • (ক) আর্থিক ঝুঁকি কম :- মিশ্র কৃষি ব্যবস্থায় একইসঙ্গে কৃষিকাজ ও পশুপালন করায় কৃষকের আর্থিক ঝুঁকি কম থাকে। কোনো কারনে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হলেও কৃষক পশু জাতীয় সামগ্রী বিক্রি করে তার আর্থিক ক্ষতিপূরণ করতে পারে।
  • (খ) কৃষকদের প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন :- কৃষকরা তাদের নিজের প্রয়োজনের জন্য খাদ্যশস্য, শাকসবজি ও দুগ্ধজাত সামগ্রি উৎপন্ন করতে পারে।
  • (গ) জমির সুষম ব্যবহার :- এই কৃষি ব্যবস্থায় জমির ব্যবহার অনেক বেশি সুষম ও সর্বাঙ্গীন হয়ে ওঠা সুযোগ পায়।
  • (ঘ) মাটির উর্বরতা বজায় :- এই কৃষি ব্যবস্থায় শস্যাবর্তন পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ ঘটে বলে মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা বজায় থাকে।
  • (ঙ) কৃষকের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি :- এই কৃষি ব্যবস্থায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদন ও পশু পালন একসঙ্গে করা হয় বলে কৃষক অনেক বেশি দক্ষ ও অভিজ্ঞ হয়ে ওঠার সুযোগ পায়।

মিশ্র কৃষির অসুবিধা :-

মিশ্র কৃষির বিভিন্ন অসুবিধা গুলি হল –

  • (ক) অনুকূল পরিবেশের অভাব :- মিশ্র কৃষি উপযোগী অনুকূল পরিবেশ পৃথিবীর সকল স্থানে পাওয়া যায় না।
  • (খ) উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার অভাব :- উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা মিশ্র কৃষির সাফল্যের অন্যতম প্রধান শর্ত। অনেক সময় উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার অভাবে মিশ্র কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে না।
  • (গ) কৃষকদের স্বল্প জ্ঞান :- মিশ্র কৃষিতে অনেক ক্ষেত্রে কৃষি বিষয়ে সকল কৃষকের জ্ঞান ও দক্ষতা না থাকায় এই কৃষি ব্যবস্থা সফলতা লাভ করতে পারে না।
  • (ঘ) রোগ বিস্তারের সম্ভাবনা :- মিশ্র কৃষি ব্যবস্থায় কোনো একটি ফসল রোগে আক্রান্ত হলে তা দ্রুত অন্যান্য ফসল ও প্রাণীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • (ঙ) মূলধন ও কারিগরি জ্ঞানের অভাব :- মিশ্র কৃষির সাফল্যের জন্য যে পরিমাণ মূলধন ও কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন হয় তা অনেক সময় কৃষকদের মধ্যে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় না।

মাইকোরাইজা কি ও ফসল উৎপাদনে মাইকোরাইজার ভূমিকা আলোচনা

প্রশ্ন-2: মাইকোরাইজা কি ? ফসল উৎপাদনে মাইকোরাইজার ভূমিকা আলোচনা কর।

মাইকোরাইজা :- মৃত্তিকাস্থিত ছত্রাকের সঙ্গে উদ্ভিদমূলের যে মিথোজীবী সম্পর্কের ফলে উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে পুষ্টি উপাদান গুলির দ্বিমুখী প্রবাহ ঘটে, তাকে মাইকোরাইজা বলে। বিজ্ঞানী আলবার্ট ফ্রাঙ্ক সর্বপ্রথম মাইকোরাইজা শব্দটি ব্যবহার করেন।

মাইকোরাইজার উপকারিতা :- (ক) মাইকোরাইজার ছত্রাক জীবজ পদ্ধতিতে খনিজ পদার্থের নিষ্কাশন ঘটিয়ে মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধি করে।

(খ) মাইকোরাইজার উপস্থিতির ফলে পোষক উদ্ভিদের রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়।

(গ) মাইকোরাইজা উদ্ভিদের N, P, K, Ca, Zn প্রভৃতির পরিবহনের মাত্রা বৃদ্ধি করে পুষ্টি প্রদান করে।

(ঘ) মাইকোরাইজা উদ্ভিদের জিব্বারেলিন, অক্সিন প্রভৃতি হরমোন উৎপাদন করে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে।

(ঙ) বর্তমান কৃষি ক্ষেত্রে কে জীবনে শাড়ি হিসেবে মৃত্তিকায় প্রয়োগ করা হয়। 

Leave a Comment