সুস্থায়ী কৃষিতে ফসল উৎপাদনে মাটির গুরুত্ব আলোচনা করা হল । এছাড়া লবণাক্ত মাটিতে কৃষিকাজ সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল ।
ফসল উৎপাদনে মাটির গুরুত্ব আলোচনা কর।
সারা বছর ক্রান্তীয় দেশের বেশি তাপমাত্রা, সূর্য কিরণের প্রাচুর্য ও দিনের দৈর্ঘ্যের সামান্য পরিবর্তন ক্রান্তীয় দেশের কৃষি উৎপাদনের প্রতিকূল। উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষের সময় সূর্যালোক গ্রহণ করে তাই সূর্যালোক ক্রান্তীয় চাষের পক্ষে সুবিধাজনক। উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শ্বসন হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন খাদ্যের ব্যায়ও বৃদ্ধি পায়।
ক্রান্তীয় দেশে দানা শস্যের শ্বসন ক্রিয়ার হার সালোকসংশ্লেষের 35%, কিন্তু নাতিশীতোষ্ণ দেশে সালোকসংশ্লেষের হারের মাত্র 25%। তাই মোট সূর্যরশ্মি নাতিশীতোষ্ণ দেশের শস্যের চেয়ে ক্রান্তীয় দেশের শস্য কম পরিমাণে পেয়ে থাকে। কারণ ক্রান্তীয় দেশে গ্রীষ্মকালে দিনের দৈর্ঘ্য নাতিশীতোষ্ণ দেশের চেয়ে প্রায় দুঘণ্টা কম।
ক্রান্তীয় দেশে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও বৃষ্টির আধিক্য শুষ্ক অঞ্চলে দীর্ঘ সময়ের সূর্যালোক কেবল সেচসেবিত এলাকার পক্ষে সুবিধাজনক। দীর্ঘ দিবা উদ্ভিদে সংকট আলোর কালের চেয়ে বেশি সময় আলো দিলে এবং হ্রস্ব দিবা উদ্ভিদে সংকট আলোর কালের চেয়ে কম সময় আলো দিলে পুষ্প প্রস্ফুটন ও উদ্ভিদের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
ক্রান্তীয় দেশের মাটির গঠন ও উর্বরতা এই জলবায়ু অনুসারে হয়ে থাকে। এই সব দেশের শতকরা 51 ভাগই ঊষর। চাষের অনুকূল নয় এমন জমিকে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের চিরাচরিত প্রথায় উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে চাষের উপযোগী করা হয়। অধিক বৃষ্টিপাত ভূমিক্ষয় করে ও উচ্চ তাপমাত্রায় জৈব পদার্থ দ্রুত বিজারিত হয়ে যায়। তাই ক্রান্তীয় বনভূমিতে এমনই এক বাস্তুতন্ত্র তৈরি হয়েছে যেখানে মাটির উর্বরতা মাটিতে থাকা জৈব বস্তুর উপর নির্ভর করে।
ক্রান্তীয় বনভূমির বৃক্ষ, গুল্ম প্রভৃতি উদ্ভিদে উর্বরতা শক্তির প্রয়োজনীয় 90% উপাদান সঞ্চিত থাকে। তাই এই সকল মাটি প্রকৃতপক্ষে চাষের পক্ষে অনুপোযোগী। অপরপক্ষে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বনভূমির মাত্র 3% পুষ্টি মাটির উপরিতলে সঞ্চিত থাকে এবং অবশিষ্ট 97% পুষ্টি নতুন উদ্ভিদের বৃদ্ধির পক্ষে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ নতুন উদ্ভিদের জন্য মাটিতে সজ্জিত থাকে। ক্রান্তীয় বনভূমির প্রায় সমস্ত পুষ্টি গাছে সঞ্চিত থাকে তাই গাছের পরিমাণ হ্রাস পেলে পুষ্টিও কমে যাবে।
লবণাক্ত মাটিতে কৃষিকাজ সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
বেশি লবণযুক্ত মাটি হলো লবণাক্ত মাটি। এই ধরনের মাটি সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়। এই মাটিতে পলি বা কাদার সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে ধাতব লবণ থাকে।
এই লবণাক্ত মাটি চাষাবাদের পক্ষে তেমন উপযুক্ত হয় না। তবে অপেক্ষাকৃত স্বল্প নোনা মাটিতে আমন ধান, তুলা আখ পাট ইত্যাদি শস্যের চাষ করা সম্ভবপর হয়।
এই ধরনের মাটি সমুদ্রের জোয়ারের জলে পুষ্ট হওয়ায় বিভিন্ন প্রকার ম্যানগ্ৰোভ শ্রেণীর উদ্ভিদ, যেমন – সুন্দরি, গরান, হেতাল ইত্যাদি জন্মায়। তবে যেসব লবণাক্ত জমিতে লবণ মুক্ত করা সম্ভব হয় সেখানে অল্পমাত্রায় সূর্যমুখী বা কাঁচালঙ্কাও চাষ করা সম্ভব।
লবণাক্ত মৃত্তিকার লবণাক্ত জলকেই সেচ ব্যবস্থার কাজে লাগানো হয়। প্রকৃতপক্ষে মানব পপুলেশনের কাজেই এই বিকল্প কৃষিজ পদ্ধতি গ্রহণ করে খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। খাদ্য তরকারি ফসলের সঙ্গে কাঠ উৎপাদনকারী উদ্ভিদ যেমন – Acacia, Casuarina, Salsola ইত্যাদি উৎপাদন করা হচ্ছে। তাছাড়া Suaeda fruticosa, Kochia প্রভৃতি হ্যালোফাইটিক উদ্ভিদের বীজ থেকে তেল উৎপাদন করা হচ্ছে।